Thursday, December 19, 2024
Homeবাঙালির ইতিহাসহেনরি কটনের স্মৃতিচারণে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের বাংলা

হেনরি কটনের স্মৃতিচারণে উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের বাংলা

ভারতে বিদেশী দ্রব্য বর্জন, স্বদেশী আন্দোলন ইত্যাদি যখন ঘটছে হেনরি কটন তখন অবসরপ্রাপ্ত হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন । সেখানকার হাউস অফ কমন্সে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর মুষ্টিমেয় সহযোগীদের সঙ্গে সরকারের ভারতনীতির সমালোচনা করছেন। লিখেছেন- জয়ন্ত মুখার্জি

আমদের দেশে দুই ধরনের ইংরেজ এসেছিল। এক ধরন ছিল উগ্র স্বজাতি প্রেমী এবং স্বজাত্যাভিমানি। ভারতীয়রা তাদের চোখে ছিল মনুষ্যেতর। তাদের আশা আকাঙ্ক্ষার কোন মূল্যই সেই সব ইংরেজের কাছে ছিলোনা । আরেক ধরণ, সংখ্যায় কম; ছিল অনেকটাই মানবিক আর সহানুভূতি সম্পন্ন। কথায় কথায় নেটিভদের ঠ্যাঙ্গানো এবং অপদস্থ করা তাদের ধাতে ছিল না। ধরন যদিও আলাদা,কিন্তু তারা দুজনেই ছিল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদেরই অংশ। স্যার হেনরি কটন পড়েন এই দ্বিতীয় দলে।
হ্যাঁ, সেই কটন যার নামে কলকাতার বুকে এখনো একটা রাস্তা আছে। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে এই কটন পরিবারের যোগ বেশ কয়েক পুরুষের। হেনরি কটনের নিজের জন্মই এই ভারতে। চেন্নাই, তখনকার ম্যাড্রাসের কুম্বাকোনাম নামক শহরে । হেনরি কটন ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। পোস্টিং এই বাংলায়। পঁইত্রিশ বছর চাকরি শেষে ফিরে যান দেশে। প্রচুর আর্টিকেল এবং কয়েকটি বই লিখেছেন। তার মধ্যে একটি – ইন্ডিয়ান অ্যান্ড হোম মেমোরিস । স্মৃতি চারণে উঠে এসেছে অনেক কথাই । আসুন তার থেকে পরিবেশন করি উনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ ও বিংশ শতকের শুরুর দিকের বাংলার কিছু ছবি।

আগেই বলেছি ১৮৬৭ সনে ভারতে আগমন । ২৯ অক্টোবারে হুগলি নদীর মোহনায় পৌঁছলেন। পরের দিন কলকাতায় পদার্পণ। কিন্তু পদার্পণ মোটেও রাজসিক হয় নি এই রাজ কর্মচারীর। মুটের পিঠে চড়ে জল কাদা পেরিয়ে ঘাটে নাবতে হয়েছিল। কারণ সেই সময় অর্থাৎ ১৮৬৭ সালে কোনও জেটিই ছিল না।
তখন কলকাতায় দুটি মাত্র হোটেল,- উইলসন্স ( আজকের গ্রেট ইস্টার্ন ) ,এবং স্পেন্সেস । অনেক কষ্টে উইলসন্সে জায়গা পেলেন। ভাগ্যিস পেয়েছিলেন ! কারন প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি চলছিল সেদিন , আর পরের দিন রাতে অর্থাৎ পয়লা নভেম্বর সেটাই হয়ে দাঁড়ায় প্রলয়কারী সাইক্লোনে । সাইক্লোনের বর্ণনা পড়ে সাম্প্রতিক আম্ফানের কথা মনে পড়তে বাধ্য । ক্ষয় ক্ষতি ও হয়ে ছিল সেই মাপে । হোটেলের জানলার খড়খড়ি ঝড়ে উড়ে গিয়ে পড়েছিলো রাস্তায়। পরের দিন ময়দানে প্রচুর গাছ আর মরা কাক পড়ে থাকতে দেখেছিলেন । সে রাত টা আবার ছিল অপেরা সিজিনের ওপেনিং নাইট। বাহারি পোশাক পরে রাত্রে থিয়েটার দেখতে আসা সাহেব বিবিদের রাস্তায় হামাগুড়ি দিতে হয়েছিল ঝড় বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। ঘোড়া সমেত ফিটন গাড়ী উলটে গিয়েছিল হাওয়ার বেগে।
কটন সাহেবের প্রথম পোস্টিং হয় মেদিনীপুরে । সেই সময় ওখানে যাওয়ার কোন ট্রেন ছিলোনা; ওনার লেখা থেকে জানতে পারছি, সেই সময় অর্থাৎ ১৮৬৭ সনে মোটে ৩০০০ মাইল রেল লাইন ছিল ভারতে। একমাত্র রাস্তা বাজরায় চেপে উলুবেরে ,সেখান থেকে পালকি চেপে পাক্কা বারো ঘণ্টায় মেদিনীপুর। এখানে এসে উনি বস হিসাবে পেলেন স্যার উইলিয়াম জেমস হার্সেল কে, যাঁর নাম স্থান পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তাঁর বাবা এবং ঠাকুরদা দুজনেই বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ।তাঁর নাম কিন্তু অন্য এক কারনে। সোনার কেল্লা সিনেমায় সিধু জ্যাঠার ফেলুদা কে করা সেই প্রশ্নটা মনে আছে? – “স্যার উইলিয়াম জেমস হারসেল ,বলতো কে ছিলেন?’’ আর তার জবাবে ফেলুদার উত্তরটা মনে আছে? হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি যার হাত ধরে ফিঙ্গার প্রিন্টিং কে এক বিজ্ঞান হিসেবে গোড়ে তোলা হয় ।
এখানে একটা উল্লেখযোগ্য তথ্য পাচ্ছি। সেই সময় বাংলায় সরকারি অফিসের সমস্ত সাধারণ কাজ বাংলায় সারা হতো । আদালতে বাংলায় তর্কাতর্কি চলতো । কটন সাহেব ভাল বাংলা বলতে পারতেন । চলতি হিন্দুস্থানিও জানতেন। বাংলা এবং ফারসি পড়তে এবং লিখতে দুটোই পারতেন। আজ বাংলায় যারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ভাষা নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য এই তথ্যটি জরুরি । আজ থেকে দেড়শ বছর আগে দফতরে বাংলায় কাজকর্ম করার অসুবিধে না হয়ে থাকলে, এই আধুনিক যুগে তা আরও অনায়াসে হতে পারে। এই দেড়শ বছরে আমাদের ভাষা নিশ্চয়ই আরও উন্নত হয়েছে। সাব ডিভিশনের ইন্চার্জ থাকার দু বছরের মধ্যে উনি দফতরের সমস্ত কাজ বাংলায় সারতেন, শুধুমাত্র চিঠির আদান প্রদান ছাড়া। অফিসে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষাই বলতেন না।
প্রথম কর্ম ক্ষেত্রে ওনার বড় ছেলের জন্ম হোল। ওখানে ওনারা একটা আইস ক্লাব খুলে ফেলেছিলেন।সত্তর মাইল দূরের কলকাতা থেকে গরুর গাড়ীতে করে বরফ নিয়ে আসা হতো। শিলা বৃষ্টির সময় পড়া বরফ যোগার করা হতো বালতি করে।
মেদিনীপুরের পর গেলেন নদীয়া জেলার চুয়াডাঙ্গায় , যা এখন বাংলাদেশে । এখানে কাটালেন দীর্ঘ তিন বছর।শুরুতেই সামলাতে হয়েছিল ১৮৭১ এর ভয়ঙ্কর বন্যা । তবে এখানকার উল্লেখযোগ্য ঘটনা হোল ভারতের প্রথম সরকারী জন গণনার কাজে সামিল হওয়া।তিনি স্ব উদ্যোগে এর সাথে জুড়ে দিয়েছিলেন এডুকেশানল সেন্সাস । কিছু নমুনা –
সমগ্র জনতার মধ্যে
লিখতে পড়তে জানা মানুষের সংখ্যা — ২ .৪%
লিখতে পড়তে জানা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ – – ৭.৪%
স্বল্প শিক্ষিত মহিলা – ৫ ( ব্রাম্ভন৪, মুসলমান ১)
মুসলমান
ফার্সি বর্ণমালার সাথে পরিচিত — ২
বাংলায় লিখতে পরতে জানা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ – ৩.৫%
হিন্দু
বাংলায় লিখতে পরতে জানা –
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ –১৩%
প্রাপ্ত বয়স্ক ব্রাম্ভন পুরুষ – ৭০%
প্রাপ্ত বয়স্ক কায়স্থ পুরুষ – ৬৯.৭%
প্রাপ্ত বয়স্ক বৈশ্য পুরুষ – ৩৮.৮%
ছোট দোকানদার, কারিগর – ৬%
চাষা – ৬.২%
জেলে – ২.৩% ।
কোলকাতায়
চুয়াডাঙ্গার কর্মকাণ্ড শেষ করে কটন সাহেবের কলকাতায় বহু আকাঙ্ক্ষিত বদলি হোল।সময়টা ১৮৭২ সন। গ্রাম-গঞ্জের একঘেয়েমি ছেড়ে রাজধানী শহরের বৈচিত্র্যের মাঝে এসে পরলেন। যদিও তখন ময়দান থেকে শেয়ালের ডাক শোনা যেতো রাতে। শীতকালে গভর্নমেন্ট হাউসের গেটের চুড়ায় পাথরের সিংহের ওপর হাড়গিলে পাখি দাঁড়িয়ে রোদ পোয়াত সারা দিন। ট্রাম আসতে চার পাঁচ বছর বাঁকি । ইলেকট্রিকের পাখা তখনও এসে পোঁছয় নি। সাহেবদের জন্য জাহাজে করে বরফ আসতো কলকাতায়। শীতের সময় ইতালি থেকে অপেরা কোম্পানি ভাড়া করে আনা হতো জনতার চাঁদায় ।
কলকাতায় তখন নানান কর্মকাণ্ড চলছে। খোলা নালা বাতিল করে আন্ডার গ্রাউন্ড নালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে । নলের জলের সাপ্লাই শুরু হয়েছে।বর্তমান হাই কোর্ট টি তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে স্যাটার্ডে ক্লাব, গলফ ক্লাব।সেগুল অবশ্য সাহেব সুবোদের জন্য। ১৮৭৪ এ কলকাতা হাওড়া সংযোগকারী ভাসমান পন্টুন ব্রিজ খুলে দেওয়া হচ্ছে। ১৮৭৫ এ প্রিন্স অফ ওয়েলস উদ্ঘাটন করলেন কলকাতা জুওলজিকাল গার্ডেনের। শুরু হওয়ার প্রথম দিকে এক ঘটনা ঘটে চিরিয়াখানায়। দুর্ঘটনাই বলা চলে। বাঘ কে খাইয়ে দাইয়ে খাঁচার দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায় ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী! আর সেই সুযোগে , একটা নয় দু দুটি বাঘ বেরিয়ে আসে খোলা জায়গায় । না, কারুর ক্ষতি করেনি তারা । বরং নিজের থেকেই লাফিয়ে গণ্ডারের ঘেরায় ঢুকে যায়। পুরো রাত সেখানেই থাকে। পরের দিন সকালে ওদের গুলি করে মারা হয়। এই দুঃখ জনক ঘটনা জনসাধারণের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল সেই সময় । আশ্চর্য সমাপতনে কিছুদিন বাদে ঐ একই ভাবে আর একটি বাঘ পালায় খাঁচা থেকে। এবারে গার্ডেন রিচে অবস্থিত আওধের নির্বাসিত রাজার নিজস্ব পশুশালা থেকে। বাঘটি বেরিয়ে সোজা গঙ্গার ধারে গিয়ে সাঁতরে অপর পাড়ে অবস্থিত শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে যায়। এই বাঘটিকেও, দুঃখ জনক ভাবে পরদিন গুলি করে মারা হয় ।
সেই সময় ভারতীয়দের সাথে সামাজিক ভাবে মেলামেশার একটা চেষ্টা চালানো হতো ইংরেজদের তরফে । সেই সূত্রে ১৮৮৭ র ১৫ ফেব্রুয়ারি এক ভোজসভার বিবরণ পাচ্ছি। তাতে সেই সময়ের বিখ্যাত এবং সন্মানিয় ইংরেজদের সাথে তৎকালীন ভারতীয়রাও আমন্ত্রিত। কে নেই সেখানে ! কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন সভাপতি উমেশচন্দ্র এবং সুরেন্দ্র-নাথ ব্যানারজি, সস্ত্রীক সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সঙ্গে দুই ভাই জ্যোতিরিন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ। বেথুন কলেজের প্রিন্সিপাল চন্দ্রমুখী বসু। বিখ্যাত ব্যারিস্টার মনমোহন ঘোষ ও তাঁর ভাই লালমোহন ঘোষ (কংগ্রেসর প্রাক্তন সভাপতি) ইত্যাদি।
এই বছরেই এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে কলকাতায়। সেপাই বিদ্রোহের পর আওধের নবাব ওয়াজিদ আলি শা কলকাতায় নির্বাসিত হয়েছিলেন। গার্ডেন-রিচের মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে উনি ওনার কয়েক হাজার সাঙ্গ পাঙ্গ সমেত জাঁকিয়ে বসেন আর জায়গাটাকে খান-পান, রহন সহনে লখনউএর প্রতিলিপি হিসাবে গড়ে তোলেন। সত্যি সত্যি সেই সময় জায়গাটাকে ‘ছোটা লখনউ’ বলে ডাকা হত।এখন অবশ্য ওটা ‘মিনি পাকিস্তান’। তা, সে যাই হোক , আওধের নবাবের মৃত্যু হোল একদিন। রাজার অনুগামীদের দ্বারা লুটপাট আর গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশ কে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল, এমনটাই কটন সাহেব জানাচ্ছেন। তখনো দেখছি কলকাতার পুলিশ ‘ওদের ‘ সামলাতে বেশ হিমসিম খেত !
১৯ শতক শেষ হয়ে আসে, সাথে সাথে কটন সাহেবের চাকরীর মেয়াদও । দেশের বিভিন্ন প্রদেশে তখন জ্বলে উঠেছে জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশ চেতনার আলো। বাংলার মাটিতে সে আলো উজ্জলতর ,যা আরও দীপ্ত হয়ে উঠবে ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের মাধ্যমে। সেই সময় বাংলার ছোট লাট ছিলেন স্যার ব্যাম ফিল্ড ফুলার। বাংলার মানুষ এবং তাদের ভাষা দুটোই ওনার কাছে অপরিচিত ছিল । যে আন্দোলন কে উনি ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে সুঝিয়ে কম করতে পারতেন তা ওনার দমননীতির প্রভাবে আরও বিশাল হয়ে দাঁড়ালো। এখানে কটন সাহেব বাঙালিদের সম্বন্ধে নিজস্ব উপলব্ধি জানিয়েছেন। তাঁর মতে বাঙালিদের মতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আর কোন প্রান্তের মানুষ কে এত সহজে শাসন করা যায় না। একটু দয়া আর সহানুভূতির সাহায্যে তাদের হৃদয় সহজেই জয় করা যায়। ফুলার সাহেব ঠিক এর বিপরীত পথে হাঁটলেন । সমস্ত পাবলিক মিটিং বন্ধ করে দেওয়া হোল।মিলিটারি পুলিশ নাবিয়ে এক ভয়ঙ্কর পরিবেশের সৃষ্টি করলেন।বাংলার রাজনীতিতে তৈরি হোল এক অদ্ভুত অস্থিরতা যাতে ঘৃতাহুতি দিলো ইংরেজদের দ্বারা সুকৌশলে সৃষ্টি করা হিন্দু মুসলিম বিভেদ নীতি। নতুন সরকারী নীতিতে মুসলমানরা সব জায়গায় অন্যায় ভাবে সুবিধা পেতে লাগলো । আর সরকারের এই পক্ষপাতিত্ব কাজে লাগাল কিছু কুচক্রী , যাদের হেড কোয়ার্টার ছিল ঢাকায়। চারদিকে লোক পাঠিয়ে রটান হোল ইসলামের অভ্যুত্থানের খবর।
‘ … advocating the wildest extremes, and proclaiming to the villagers that the British government was on their side and would exact no penalty for violence done on Hindoos.’
এই ধরনের বিষাক্ত প্রচারকার্য সরকারের চোখের সামনে হতে থাকল। কোন রকম পদক্ষেপ নেওয়া হোল না এসব বন্ধ করার জন্য । ফলে যা হবার তাই হোল। শুরু হোল দাঙ্গা। লোক মরল। হিন্দুদের দোকানপাট লুট করে , তাদের মন্দির অপবিত্র করে এবং পরিশেষে মধুরেন সমাপয়েতের মত হিন্দু মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হোল। কিছু শহর খালি করে লোক পালিয়ে বাঁচল। প্রাণ ও মান বাঁচাতে মহিলারা রাত্রে পুকুরে গিয়ে লুকলেন । গ্রামাঞ্চলে এক আতঙ্কের পরিবেশ ছেয়ে রইল।
সরকারী ভাবে বলা হোল বিদেশী দ্রব্য বর্জনের স্বদেশী আন্দোলনের জন্যই এই সব গণ্ডগোল হয়েছে। যদিও এ কথার কোন ভিত্তি ছিলোনা। বিচার বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণ হোল দাঙ্গার উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুদের ক্ষতি সাধন। বিদেশী দ্রব্য বয়কটের সঙ্গে এর কোন সন্মন্ধ নেই।
ভারতে এইসব ঘটনা যখন ঘটছে হেনরি কটন তখন অবসরপ্রাপ্ত হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন । সেখানকার হাউস অফ কমন্সে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর মুষ্টিমেয় সহযোগীদের সঙ্গে সরকারের ভারতনীতির সমালোচনাও করছেন। কিন্তু যে বিষবৃক্ষের চারা পোঁতা হয়ে গেছে তার মহীরুহ হয়ে ওঠা ছিল সময়ের অপেক্ষা। কালের নিয়মে তাতে ফল ধরাও ছিল অবধারিত। সেই বিষ ফলের জ্বালায় জর্জরিত হবে এমন এক প্রদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যোগদান ছিল সর্বাধিক। সর্বভারতীয় বোধ ও স্বদেশ চেতনায় উদ্বুদ্ধ আত্মহারা বাঙালি জাতি নিজের সবকিছু খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে তার খণ্ডিত অস্তিত্বের ক্ষতস্থান লেহন করবে আর বিশ্ব-মানবিক মলমে নিজের ব্যথা ভোলার চেষ্টা করবে একদিন। সেই সময় আসতে তখনো আরও চার দশক বাকি। সে আর এক ইতিহাস।

shoptodina.com
shoptodina.comhttps://shoptodina.com
সপ্তডিঙা। কথাটা শুনলেই মনে আসে বাঙালির সমুদ্রবাণিজ্যের এক গৌরবময় ইতিহাস। গৌড়ের বণিকরা সাতটি বিশাল নৌকার এই সমবায় নিয়ে সিংহল, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, চীন, রোম, গ্রীস, ক্রীট, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করে ফিরে আসতেন স্বর্ণমুদ্রার ভাণ্ডার নিয়ে। সপ্তডিঙা তাই বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অভিজ্ঞান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisingspot_img

Popular posts

My favorites