Wednesday, December 18, 2024
Homeবাঙালির ইতিহাসসিন্ধু সভ্যতার তরকারি আবিষ্কার

সিন্ধু সভ্যতার তরকারি আবিষ্কার

সিন্ধু সভ্যতার কোন এক নাগরিকের ব্যবহৃত শীল পাটা, ভাঙা হাঁড়ির অংশ এবং আরও কিছু তৈজসপত্র খুঁজে পান। সেই শীল পাটা ও হাঁড়ি ল্যাব পরীক্ষায় জানা যায়, সেই শীল পাটায় পেষা হয়েছিল আদা, হলুদ, জিরা। লিখেছেন- আকাশ তরফদার 

আচ্ছা, তরকারি এবং স্টু; এ দুটো খাবারই তো ঝোল প্রধান খাবার, দুটোই কার্বজাতীয় খাবারের সাথে খাওয়া হয়; কিন্তু এই দুটো খাবারের মাঝে পার্থক্য কোথায়? কেন এই দুটো খাবারকে আলাদা নামে ডাকা হয়?

এর প্রধান কারণ সম্ভবত রন্ধনশৈলীতে। আমরা তরকারি যেভাবে রান্না করি, সেটা হলো একটি গরম পাত্রে তেল ঢেলে, প্রথমে মশলা দিয়ে, তারপর অন্যান্য উপকরণ যোগ করে জল দিয়ে রান্না করা হয়, সাধারণত উচ্চ আঁচে। অপরদিকে, স্টু রান্না করা হয় সমস্ত উপকরণ একসাথে মিশিয়ে জল দিয়ে হালকা আঁচে অনেকক্ষণ ধরে রান্না করা হয়।

তরকারি রান্নার এই ধরন শুধুমাত্র ভারতেই প্রচলিতভাবে দেখা যায়। কোরিয়া, ইউকে, হংকং, চায়না, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, জাপানেও এভাবে তেলে মশলায় তরকারি রান্না করা হয়; কিন্তু সে সমস্ত জায়গায় তরকারি রন্ধন পদ্ধতি পৌঁছেছে ভারতীয় ব্যবসায়ী বা ব্রিটিশদের মাধ্যমে।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে মশলা তেলে ভেজে রান্নার প্রচলন কারা আগে শুরু করেছিল?

এর উত্তর হচ্ছে সিন্ধু সভ্যতার নাগরিকেরা।

২০১০ সালে, ভ্যাঙ্কুভারের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক অরুণিমা কাশ্যপ এবং স্টিভ ওয়েবার রাখিগাড়িতে খনন কাজ পরিচালনার সময় সিন্ধু সভ্যতার লোকদের রান্নার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু উপকরণ খুঁজে পান। তারা সিন্ধু সভ্যতার কোন এক নাগরিকের ব্যবহৃত শীল পাটা, ভাঙা হাঁড়ির অংশ এবং আরও কিছু তৈজসপত্র খুঁজে পান।

সেই শীল পাটা ও হাঁড়ি ল্যাব পরীক্ষায় জানা যায়, সেই শীল পাটায় পেষা হয়েছিল আদা, হলুদ, জিরা। সাথে আখের রস, শুকনো কাঁচা আম এবং সেই পেষা মশলা দিয়ে হাঁড়িতে রান্না করা হয়েছিল বেগুনের তরকারি। আরো পাওয়া যায় সরিষা, জাফরান, ধনিয়া, তেঁতুল সহ নানান মশলার ব্যবহারের প্রমাণ।

এই তরকারি আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে রান্না করেছিলেন কোন এক ব্যক্তি। হয়তোবা সেই রান্নার খাদ্য গ্রহণের পর তারা তাদের সিন্ধু সভ্যতার শহরটি ত্যাগ করে চিরদিনের মত চলে যান। শীল পাটা, হাঁড়িগুলো ওজনে ভারী হওয়ায় তারা সেগুলো রেখেই চলে যান।

এই আবিষ্কার হচ্ছে মানব ইতিহাসের সবথেকে প্রাচীন কোন মশলা দিয়ে রান্না করা খাবারের উদাহরণ। এর আগে মশলা পিষে সেটাকে তেল দিয়ে সাথে আরো মুখরোচক মজার জিনিস দিয়ে এভাবে রান্নার কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি। মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই মশলা পিষে এসেছে, কিন্তু সেটা ছিল চিকিৎসার প্রয়োজনে। স্বাদ করে খাবার নিমিত্তে এর আগে কোন সভ্যতা এভাবে মশলা তৈরি করেছে বলে জানা নেই।

আমরা ভারতীয়রা এভাবেই তরকারি রান্না করি। আপনি আজকে ভারতের যেকোনো গৃহিণীকে যদি বলেন বেগুনের তরকারি রান্না করতে, তিনি প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার নাগরিকদের মতই তরকারি রান্না করবেন। যদি বলেন তরকারিতে টক দিতে, তাহলে সে হলুদ মাখানো শুকনো কাঁচা আমই দেবেন।

সিন্ধু সভ্যতার এই রন্ধনশৈলী পরবর্তীতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সিন্ধু সভ্যতার নাগরিকেরা বসতি গড়েন ভারতের অনেক স্থানে। পরবর্তীতে তারা ভিন্ন ভিন্ন কালচার গড়ে তোলেন সময়ের সাথে সাথে। আলাদা ভাষা, আলাদা জাতি, আলাদা কাস্টম; কিন্তু তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সেই রান্নার স্টাইলটি ভোলেননি। নিজেদের মতন করে নানা ভাবে তারা তরকারি রান্না করে গেছেন। তরকারি হচ্ছে ভারতীয়দের সিগনেচার ডিশ, আর ডিশের জন্ম হয় প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতায়।

shoptodina.com
shoptodina.comhttps://shoptodina.com
সপ্তডিঙা। কথাটা শুনলেই মনে আসে বাঙালির সমুদ্রবাণিজ্যের এক গৌরবময় ইতিহাস। গৌড়ের বণিকরা সাতটি বিশাল নৌকার এই সমবায় নিয়ে সিংহল, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, চীন, রোম, গ্রীস, ক্রীট, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করে ফিরে আসতেন স্বর্ণমুদ্রার ভাণ্ডার নিয়ে। সপ্তডিঙা তাই বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অভিজ্ঞান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisingspot_img

Popular posts

My favorites