Wednesday, December 18, 2024
Homeকালীক্ষেত্র আন্দোলনমা কালীর প্রসারিত জিহ্বা: কারণ, তত্ত্ব ও তাৎপর্য

মা কালীর প্রসারিত জিহ্বা: কারণ, তত্ত্ব ও তাৎপর্য

মা কালী তাঁর জিহ্বা প্রসারিত করে আছেন: এর কারণ কি? কিছু অর্বাচীন শাস্ত্রে দাবি করা হয় মা তাঁর পতি শিবের ওপরে পা দিয়ে লজ্জায় জিভ কেটেছেন, কিন্তু সেটা একেবারেই আজগুবি কল্পনা, অনৈতিহাসিক এবং দার্শনিকভাবে দুর্বল। মায়ের পদতলে আসলে একটি শব আছে, শবই চিরকাল মায়ের মূর্তিমণ্ডলে থাকে পালযুগ থেকে, মা কালী শববাহনা।

কিন্তু পরে বলা হয়েছে মায়ের পাদস্পর্শে শবটি শিবে পরিণত হয়েছে। তা মূর্তির শব যখন শিবত্ব পায়নি তখনও কিন্তু মা কালী জিহ্বা প্রসারিত করে ছিলেন কাজেই ওই শিবকে দেখে জিভ কাটার গল্পটা ঠিক নয়। এছাড়া তন্ত্রসার প্রভৃতি গ্রন্থে সর্বত্র দেখি মা কালীর মূর্তি ও ধ্যানমন্ত্রে মা জিহ্বা প্রসারিত করে আছেন, মূলত রুধিরপান করবেন বলে কিন্তু কোথাও শিবের ওপরে পা দিয়ে লজ্জায় জিভ কাটার কোনও গল্প নেই।

মা কালীর প্রসারিত জিহ্বার কারণ, তত্ত্ব ও তাৎপর্য জানব।

★ মুণ্ডক উপনিষদ অগ্নির সপ্ত জিহ্বার মধ্যে কালীর নাম করে।

হরপ্পা সভ্যতায় বলি গ্রহণ করতেন সপ্ত মাতৃকা। এই মর্মে মূর্তি ফলকের প্রত্ন প্রমাণ পাওয়া গেছে।

মা কালীর প্রসারিত জিহ্বা অতএব আগুনের জিহ্বা। মা কালীর জিহ্বা অতএব বলি গ্রহণ করার জন্য প্রসারিত হয়ে আছে।

★ মা কালী রুধিরপ্রিয়া বলে প্রাচীন যুগ থেকেই আখ্যা পান। তিনি রক্তবীজ অসুরের বধ করেন। তিনি অসুরদের রুধির পান করবেন বলে তৃষ্ণার্ত, তাঁর প্রসারিত জিহ্বা সেই তৃষ্ণার দ্যোতনা বহন করে।

★ মা কালীর একটি জনপ্রিয় রূপ চামুণ্ডা (শ্রী শ্রী চণ্ডী অনুযায়ী কালী যখন চণ্ড ও মুণ্ডকে বধ করেন তখন তিনি চামুণ্ডা)। প্রাচীন যুগে জনপ্রিয় চামুণ্ডা মূর্তিতেও দেখি মা মুখ ব্যাদান ও জিহ্বা প্রসারিত করে থাকেন বুভুক্ষু রূপে। এই ধারাবাহিকতাই মা কালীর প্রসারিত জিহ্বায় পরিলক্ষিত হয়।

★ মা কালীর অতীতে হরপ্পা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে বলাকা মাতৃকা রূপ ছিল। এই বলাকা মাতৃকাই কালী। ব্রাহ্মী থেকে আজকের বাংলা লিপিতে ক অক্ষরের ডাঁটি এই বলাকা মাতৃকার চঞ্চু, যা পরে প্রসারিত জিহ্বা। মা কালীর প্রসারিত জিহ্বা এই ক বর্ণের ডাঁটি। ক অক্ষর কালীর প্রতীক, সমগ্র বাংলা বর্ণমালাই মা কালীর তন্ত্রধর্ম থেকে এসেছে, কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী বলা হয় সেজন্য।

★ কাল ও কালী অভিন্ন। তাই এক অর্থে মা কালীর জিহ্বা কালগ্রাসেরই প্রতীক। কিন্তু কালী স্বয়ং কালের কলন করেন, অর্থাৎ তিনি তাঁর জিহ্বা দ্বারা কালকেও গ্রাস করেন, তিনি আদ্যা নিত্যা অনাদি অনন্ত: মা কালী কালেরও অতীত।

★ হিন্দু সমাজে বিশেষ করে আর্যাবর্ত-গোবলয়ে পৃথিবীর বাকি সব জায়গার মতোই লিঙ্গবৈষম্য ও বর্ণবৈষম্য দেখা যায়। বৈদিক পৌরাণিক মতে স্ত্রীলোক ও শূদ্র অনধিকারী। কিন্তু তন্ত্রে লিঙ্গভেদ ও বর্ণভেদ নেই। কালীর প্রসারিত জিহ্বা সমস্ত বৈষম্য ও অন্যায়ের শাসনের চূড়ান্ত সমাপ্তি। মেয়েরা জিভ বের করে থাকলে যে সমাজে খারাপ বলে, কালী সেই সমাজকেই তাঁর জিহ্বায় গ্রাস করেন।

★ কালীই জগদকারণ, কালীই জগদবিলয়। কালী সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়। ব্রহ্মাণ্ড ছিল না যখন মুণ্ডমালা কোথায় পেলি, শাক্ত কবি গেয়েছেন। আমরা জানি মায়ের মুণ্ডমালা প্রতীকী, মায়ের মূর্তিমণ্ডলে প্রতি চিহ্নের প্রতীকী তাৎপর্য আছে।

সেভাবেই মা কালীর জিহ্বা প্রলয়ের প্রতীক। প্রলয়ের সময় তিনি এই প্রসারিত জিহ্বায় জগৎ গ্রাস করেন।

shoptodina.com
shoptodina.comhttps://shoptodina.com
সপ্তডিঙা। কথাটা শুনলেই মনে আসে বাঙালির সমুদ্রবাণিজ্যের এক গৌরবময় ইতিহাস। গৌড়ের বণিকরা সাতটি বিশাল নৌকার এই সমবায় নিয়ে সিংহল, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, চীন, রোম, গ্রীস, ক্রীট, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করে ফিরে আসতেন স্বর্ণমুদ্রার ভাণ্ডার নিয়ে। সপ্তডিঙা তাই বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অভিজ্ঞান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisingspot_img

Popular posts

My favorites