Monday, December 23, 2024
Homeকালীক্ষেত্র আন্দোলনকৌশিকী অমাবস্যা: মা তারার উপাসনা ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

কৌশিকী অমাবস্যা: মা তারার উপাসনা ও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা

বাংলা তথা ভারতে বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের আদান প্রদানের মাধ্যমে দশাবতারের অন্যতম যেমন বুদ্ধ নিজে তেমন দশমহাবিদ্যার অন্যতম হলেন মা তারা। লিখেছেন- ডঃ ঋতুপর্ণা কোলে।

আজ কৌশিকী অমাবস্যা। এই বিশেষ দিনে বাঙালি মা তারার উপাসনায় নিবেদিত হয়।  হিন্দু ও বৌদ্ধতন্ত্রে মা তারার গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে মা তারার বিবর্তনটা খুবই আশ্চর্যজনক।

মাতৃধর্মের ইতিহাসে সন্তান কোলে মাতৃকা হরপ্পা সভ্যতাতেই পাওয়া যায়। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। সেই মাতৃকা মূর্তি পাওয়া যায় চন্দ্রকেতুগড়ে। অর্থাৎ ২৫০০ বছর আগেকার গঙ্গারিডাই যুগ থেকে বাঙালি আজও সন্তান কোলে মাতৃকার আরাধনা করে আসে মা তারা, গণেশ জননী কিংবা মা ষষ্ঠীর আধারে।  অন্যদিকে বৌদ্ধতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য সন্তান কোলে মাতৃকা হলেন হারিতী। এই বৌদ্ধযুগের আর একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী হলেন মা তারা। হারিতী সন্তানের জন্মদাত্রী এবং তিনি সন্তানকে পালন করেন। অন্যদিকে মা তারা সন্তানকে রক্ষা করেন।

সন্তান কোলে মাতৃকা
হরপ্পা ও গঙ্গারিডাই সভ্যতার মাতৃকা

মা তারার বিভিন্ন মূর্তি ও চিত্রকলা খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকেই। প্রাচীন গান্ধার প্রদেশে অর্থাৎ বর্তমানের আফগানিস্তান প্রাচীন তারামূর্তির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস বলছে, পালযুগে অনেক তারাপীঠ ছিলো সারা ভারত জুড়ে। নানা রূপভেদও দেখা যেত। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য শান্ত রূপ ও উগ্ররূপ। এই শান্তরূপই পরবর্তীকালে হারীতি মূর্তির সাথে মিলে যায় এবং হিন্দুধর্মে প্রবেশ করে। হিন্দু ধর্মে তারা হয়ে ওঠেন সন্তান কোলে মাতৃকার আর এক রূপ সেই সন্তান এখানে শিব। অন্যদিকে একাদশ শতক নাগাদ মা তারার উগ্রমূর্তি কালীমূর্তির সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। দশমহাবিদ্যায় সেই উগ্ররূপী মহামায়া তারা রূপে পরিচিতি লাভ করেন। বৌদ্ধধর্মের উগ্রতারার পায়ের তলার শবদেহ-ই হিন্দুধর্মে শিব।

বাংলা তথা ভারতে বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের আদান প্রদানের মাধ্যমে দশাবতারের অন্যতম যেমন বুদ্ধ নিজে তেমন দশমহাবিদ্যার অন্যতম হলেন মা তারা। কিন্তু জাপান কিংবা তিব্বতে পালযুগের মূর্তিই বর্তমানে আরাধ্য।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, কৌশিকী অমাবস্যার সঙ্গে মা তারা সম্পর্ক কোথায়? পুরাণের একটি পাঠ অবশ্যই আছে। সেখানে বলা হয় এই অমাবস্যা তিথিতে কৌশিকী নাম নিয়ে শম্ভু নিশম্ভুকে বধ করেন দেবী। অর্থাৎ অশুভ শক্তির হাত থেকে সন্তানকে রক্ষা করেন। কিন্তু আমরা ভাবার চেষ্টা করবো ইতিহাসের প্রেক্ষিতে। আগেই বলা হয়েছে, মা তারা হলেন একাধারে সন্তানকে ধারনকারী অন্যদিকে রক্ষাকারী। বর্তমানে তারাপীঠ মন্দিরে সন্তান কোলে মাতৃকারই আরাধনা হয়। সেই তারাপীঠের অন্যতম সাধক বামাখ্যাপা ১৮৬৭ সালে এই অমাবস্যা তিথিতে সিদ্ধি লাভ করেন। সেই থেকেই এই তিথিকে পালন করার প্রথা শুরু।

মা তারা
মা তারা, মন্দির, বামাখ্যাপা

তবে এই তিথির নাম কৌশিকী আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। সুকুমার সেনের মতে, কুশিক নামক এক জাতিগোষ্ঠীর আরাধ্যা কুলদেবী কৌশিকীর আরাধনা হত প্রাচীন ভারতে। কিন্তু কুশিক থেকে কৌশিকী ব্যুৎপত্তি বিস্মৃত হওয়ায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে মহাদেবীর কোষ থেকে জাত হয়েছেন বলে কৌশিকী। দেবী কৌশিকী মা কালীরই অন্যতম প্রাচীন রূপ, এবং তাঁর উপাসনা হত এই তিথিতে। এই কারণে কৌশিকী অমাবস্যা বলা হয়।

মাতৃকা আরাধনার ধারায় প্রতিটি অমাবস্যা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বছরের এই সময় এই কৌশিকী অমাবস্যা বা ভাদ্র অমাবস্যার পরে আসে আশ্বিনের অমাবস্যা বা মহালয়া যখন পিতৃপক্ষের শেষ হয়ে দেবীপক্ষের সূচনায় শারদোৎসবের আনন্দে মাতে বাঙালি বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠে। আর তারপরে আসে কার্তিকী অমাবস্যা বা দীপান্বিতা কালীপুজো, অতএব মা কৌশিকী কালী আমাদের আসন্ন দুর্গাপুজো কালীপুজোর আগে আসেন, আমাদের সেই মহামাতৃসাধনায় প্রস্তুত করতে, সিদ্ধ করতে। এই কৌশিকী অমাবস্যা তিথি তন্ত্রসাধনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ।

shoptodina.com
shoptodina.comhttps://shoptodina.com
সপ্তডিঙা। কথাটা শুনলেই মনে আসে বাঙালির সমুদ্রবাণিজ্যের এক গৌরবময় ইতিহাস। গৌড়ের বণিকরা সাতটি বিশাল নৌকার এই সমবায় নিয়ে সিংহল, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, চীন, রোম, গ্রীস, ক্রীট, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করে ফিরে আসতেন স্বর্ণমুদ্রার ভাণ্ডার নিয়ে। সপ্তডিঙা তাই বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অভিজ্ঞান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisingspot_img

Popular posts

My favorites