Thursday, January 9, 2025
Homeকালীক্ষেত্র আন্দোলনইউরোপের মাটিতে মাতৃপূজার বীজ: সারা-লা-কালীর ইতিহাস

ইউরোপের মাটিতে মাতৃপূজার বীজ: সারা-লা-কালীর ইতিহাস

চারিদিকে খ্রীষ্টমাস বা বড়দিনের সমারোহ। তারই মাঝে মনে পড়ে যায় খ্রীষ্টান জগতে ছদ্মনামে পূজিতা মা কালীর এক রূপ। মায়ের সেই রূপের সাথে জড়িয়ে আছে মাতৃপূজক সংস্কৃতির অনেক লাঞ্ছনার ইতিহাস; উৎপীড়নের দীর্ঘশ্বাস। আজ জানব সেই বিশেষ রূপ, সারা-লা-কালীর কথা। লিখেছেন- ডঃ রক্তিম মুখার্জি।

আনুমানিক পনেরোশো বছর আগে পারস্যের সাসানিয় বংশের সম্রাট বাহরামের শাসনকালে একদল ভারতীয় যুদ্ধবন্দী হিসেবে পারস্যে আসেন। তাঁদের মধ্যে মাতৃপূজার বিশেষ প্রচলন ছিল এবং সম্ভবত তাঁদের মধ্যে প্রাচীন বাঙালিরাও ছিলেন। এঁরা কালীর পূজা করতেন। পারস্যে তাঁদের জীবন ছিল অত্যন্ত যন্ত্রণাময়; দুর্ভিক্ষপীড়িত। পারস্যসম্রাটের মৃত্যুর পর এঁরা দেশে দেশে জড়িয়ে পড়েন। এক জায়গায় স্থির না থেকে বিভিন্ন স্থানে রমণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন বলে এই গোষ্ঠী রোমানি নামে পরিচিত হন।
মিশরের পথ দিয়ে এঁরা ইউরোপের ফ্রান্স, রোমানিয়া, বুলগেরিয়ায় আসেন নবম শতকের পর থেকে। উগ্র খ্রীষ্টান পরিমণ্ডলে মূর্তিপূজা বিশেষ করে মাতৃপূজা ছিল শয়তানের উপাসনা; যার একমাত্র শাস্তি নৃশংস মৃত্যু। তাই তাঁরা ইষ্টদেবী কালীর দিগম্বরী রূপকে আবৃত করলেন খ্রীষ্টান সন্ন্যাসিনীর সাদা পোশাকে। তাঁর সাথে জুড়ে গেল যীশুর শিষ্যা মেরীর সহচরী এক কৃষ্ণাঙ্গ সাধিকা সারার কিংবদন্তি। আর এভাবেই রোমানি জাতির মা কালীর উপাসনা রক্ষা পেল সারা-লা-কালীর উপাসনার মাধ্যমে।

সারা-লা-কালী আজও পূজিত হচ্ছেন রোমানি অধ্যুষিত ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তের গির্জায়। তাঁর প্রধান তীর্থস্থান দক্ষিণ ফ্রান্সের Saintes-Maries-de-la-Mer গির্জা। ইউরোপের আপামর জনজাতি ও রোমানি জাতির মাধ্যমেই ইনি ইউরোপের লোকসংস্কৃতিতে মায়ের স্থান লাভ করেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে খ্রীষ্টধর্ম আজও তাঁকে saint বা সন্ত মনে করে না। যেভাবে মা তারা প্রথমদিকের বৌদ্ধধর্মে ছিলেন কেবলই এক বোধিসত্ত্ব; ঊষা ছিলেন ইন্দ্রের হাতে ধর্ষিত এক মাতৃকা; আর ইসকনের বৈষ্ণব ধর্মে মা দুর্গা যেমন কৃষ্ণের দাসী। সারা-লা-কালী আজও মূলধারার খ্রীষ্টধর্মে সেই ভাবেই প্রান্তিক; উপেক্ষিত। এবং শুধুমাত্র এই মাতৃপূজার ধারার সাথে যুক্ত বলেই রোমানি জনজাতিকে ইউরোপের সুসভ্য সমাজ নিম্নস্তরের, ব্রাত্য, অস্পৃশ্য পর্যায়ে নামিয়েছিল। শিকড় হারিয়েও পরদেশে শিকড়ের মায়া ধরে রাখার বিড়ম্বনা অনেক।

সারা-লা-কালীর বার্ষিক উপাসনা হয় মে মাসের চব্বিশ পঁচিশ তারিখে। ঐদিন তাঁর ফ্রান্সে প্রথম পদার্পণের তিথির স্মারক হিসেবে তাঁর মূর্তি চার্চ থেকে বের করে এনে সমুদ্রের জলে স্নান করানো হয়। স্নানের পর নবরূপে সারা-লা-কালী আবার প্রতিষ্ঠিত হন তাঁর আসনে। মোমবাতি ও ফুলের উপহারে সাজানো হয় তাঁর বেদি। আমাদের মাতৃকার আষাঢ়ের স্নানযাত্রা; নবপত্রিকার মহাস্নান; বিজয়ার প্রতিমা নিরঞ্জন এবং দীপাবলির প্রাচীন স্মৃতি এঁরা এভাবেই ধরে রেখেছেন ইউরোপের মাটিতে।

shoptodina.com
shoptodina.comhttps://shoptodina.com
সপ্তডিঙা। কথাটা শুনলেই মনে আসে বাঙালির সমুদ্রবাণিজ্যের এক গৌরবময় ইতিহাস। গৌড়ের বণিকরা সাতটি বিশাল নৌকার এই সমবায় নিয়ে সিংহল, যবদ্বীপ, সুমাত্রা, চীন, রোম, গ্রীস, ক্রীট, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করে ফিরে আসতেন স্বর্ণমুদ্রার ভাণ্ডার নিয়ে। সপ্তডিঙা তাই বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অভিজ্ঞান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Advertisingspot_img

Popular posts

My favorites