সূর্যোদয়ের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। নতুন দিন আমাদের সামনে মেলে ধরবে ইতিহাসের সেই পাতাটা যা লেখা শুরু হয়েছিলো আমাদের গঙ্গারিডাই-এর সঙ্গেই। লিখছেন- ডঃ ঋতুপর্ণা কোলে
প্রথম পর্ব
ইতিহাসের অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানোর নেশা একবার পেয়ে বসলে ঘরে বসে থাকা দুষ্কর হয়ে যায়। কিন্তু ছুটি বড়ো বালাই। হঠাৎ-ই সুযোগ হয়ে গেলো শনি ও রবিবারের আগে ও পরে স্বাধীনতা দিবস ও রাখি বন্ধন। যাত্রার অভিমুখ সম্ভাজি নগর তথা ঔরঙ্গাবাদ। ছোটো থেকে ইতিহাস বই-য়ের পাতায় পড়া, স্বপ্ন কল্পনায় দেখা সেই অজন্তা ইলোরার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো। এ যেনো অবিশ্বাস্য।
শুরুটা শুরু থেকেই করা ভালো। কেবল এই ভ্রমণের নয়, ইতিহাসের গলিতে পথ হারানোর শুরুটাও এখান থেকেই হোক। সময়ের কাঁটা ধরে পিছিয়ে গেলে হরপ্পা পর্যন্তও যাওয়া যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্থান পরিদর্শনের থেকে মিউজিয়াম ভ্রমণ অনেক বেশি কাজের। তা দিল্লিতে থাকার সুবাদে ন্যাশানাল মিউজিয়ামে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েই গেছে।
বিকাল চারটে। আমাদের বিমান ঔরঙ্গাবাদের মাটি স্পর্শ করলো। ছোট্ট এয়ারপোর্ট কিন্তু প্রথমেই শিহরণ জাগায়। অজন্তার গুহাচিত্রের সব বিরাট বিরাট ছবি স্বাগত জানাচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।
অবাক বিস্ময়ে যখন এদিক ওদিক দেখছি ব্যাগটাও চলে এলো। জানান দিলো, এইখানে আটকে থাকলে চলবে না। যেতে হবে এখনো ১০০ কিমির মতো পথ।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। মিনিট দশেকের মধ্যেই রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করলো। পথের দুপাশের দোকান কমে গিয়ে উঁকি দিতে লাগলো ছোট ছোট পাহাড়। একের পর এক পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এগিয়ে চললাম। মাঝে মাঝে একটা ছোট শহর কিংবা দূরে কোনো ছোট গ্রাম। ড্রাইভার দাদা ইতিহাস, এলাকার রাজনীতি, অর্থনীতি নিয়ে নানা তথ্য দিতে দিতে পৌঁছে দিলেন ‘অজন্তা গ্রীনস’-এ। এটাই আমাদের দুই রাত মাথা গোঁজার আস্তানা।
ঘড়িতে তখন ছ’টা। সূর্য ডুবে গেলেও সারা আকাশে আলো তখনও ছড়িয়ে। ঘরের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো, “ও যো পাহাড় দেখ রাহে হো। উসি পাহাড়কে অপজিট সাইট মে গুহা হ্যা”। পেছন ফিরে দেখি হোটেলের একটি ছেলে। জল দিতে এসেছে।
জানা মাত্রই অস্থিরতা গ্রাস করলো। সূর্যোদয়ের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই। নতুন দিন আমাদের সামনে মেলে ধরবে ইতিহাসের সেই পাতাটা যা লেখা শুরু হয়েছিলো আমাদের গঙ্গারিডাই-এর সঙ্গেই।
চলবে…